নিপুদাহ পর্ব(২)
শৈত্য কবির
অন্ধকারের আভা ইতেমধ্যে সন্ধ্যা রাণী তার চারিদিকে ছড়িয়ে দিয়েছে। মোহিনী অবশ্য ঠিকই জ্বলছে।শীর্ষেন্দু
পুনরায় বেরোনোর উদ্দ্যেগ নিচ্ছে এমন সময় আনন্দকে কোলে নিয়ে হেমের সাথে
ফিরে এলো নিপু। শীর্ষেন্দুর অনুরোধে এই যাত্রায় তিনজন মোহিনীর হাত থেকে
নিস্তার পেল। কিন্তু নিপুর মনটা খুব খারাপ,নিপু কিছু গিয়েছিল লাহা বাড়িতে।সেখানে ওর দুইটি বন্ধু আছে।ওর বন্ধু রুপা তারই বোন মিতালি। এই কিছু
দিন আগেই তো ওর বিয়ে হলো আর হঠাতই ওর স্বামীটা মারা গেলো। আর সাথে বিদায় হলো
রুপার দিদিও; দাহ করা হলো মিতালিকেও।আজ তাই সারাটা দিন রূপার কাছে ছিলো
নিপু। হেমু আর আনন্দ রূপার ভাইদের সাথে খেলছিল।বড় দাদার বিয়ে নিয়ে কতো
হই-হট্টগোল চলছে।এই বাড়ীর বড়ো ছেলের বিয়ে আয়োজনে কোনো ত্রুটি নেই। চারিদিক থেকে
অতিথিও আসতে শুরু করেছে।নিপুর বড় মাসী সেই রাতেই হাজির।ওর বড়ো
মামীর মেয়ে ওর বয়সীই।ওকে দেখে নিপু একটু হাসল বটে। নিপুর মাকে বলেই রেখেছিলো আজ
সে মায়ের সাথে ঘুমাবে কিন্তু ওকে দেখে মত বদলালো। কিন্তু মনের মনের ভেতর
অনেক প্রশ্ন কেও বুঝবেনা।তাই তৎক্ষণাত নিপু মায়ের কাছে রান্না ঘরে চলে
গেলো।বিয়ে বাড়ির আয়োজন,বাড়িতে অতিথিদের আশা যাওয়া শুরু
হয়েছে মোহিনী তো খুবই ব্যস্ত। কিন্তু মেয়ের মনে যে কিছু
একটা ঘুরপাক খাচ্ছে ঝড় তুলছে,মা সেটি ঠিকই বুঝেছিল।নিপু পেড়ে পেতে মায়ের কাছে বসতে বসতে মা ওর হাতের ভিতর গোটা
চারেক রসুন দিল।রসুনের খোসা ছারাতে ছাড়াতে নিপু সব বলল।সাথে নিপু
কিছু প্রতিবাদও করল। এ যেন নিপু কিছুতেই মানতে পারেনা। এ কেমন রীতি।আহব পরিহাস,আদ্ভুদ প্রতিশোধ।
মোহিনী চুপ থাকে একই প্রশ্ন যে তার নিগেরও। শুধু
ভগবানের কাছে প্রার্থনা স্বামীর আগে যেন মৃত্য হয়।তবে নিপুর প্রতিবাদ এই রীতি
মানতে না পারা প্রতিবেশিনী লীলা ঠাকুরুন শুনেছিলো।তা নিয়ে একটা প্রকট কা-ঘটে
গেল বাড়িময়।নিপুর ভিতর বিষয়টি রেখাপাত করেছে। কিছুতেই মেলে না তার এই
রীতিনীতির অংক। খুব ঘটা করে সম্পন্ন হলো শীর্ষেন্দুর বিয়ে।নতুন বঊ আসল,নিপু সেদিনের পর
থেকে কেমন যেন হয়ে গিয়েছে। সবাই কে ও একই প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে।নতুন বঊদির কাছে তো নিপু সেই প্রশ্ন
জিঞ্জেস করেই ফেলল।বঊদি বলল তাই তো এত পূজা অর্চনা এত উপবাস,এত মানত যেন স্বামী দীর্ঘজীবী হয়।নতুন বঊদির সাথে নিপুর বেশ ভাব হয়েছে। প্রায়
সময় একইসাথে থাকে।কিন্তু সন্ধ্যার প্র নিপু যেই পড়তে বসে বউদি সেই অনত্র চলে যায়। নিপুর বাবার খুব ইছা
মেয়েকে পড়ানোর।এখানে তো আর কোনো সুযোগ নেই। তাই তো বাবা স্কুল থেকে পুরানো বই
এনে দিয়েছে।আগে নিপু বাবার কাছেই পড়তে বসত।এখন আর বাবার কাছে বসা
লাগেনা।নিপুর ঠাকুমার ঘোরতরো আপত্তি ছিল।এখনও আছে। নিপু পড়তে বসলেই হাকডাক পাড়ে।বউদি
নিপুর সাথে না পড়লেও,পড়ার সময় পাশে না থাকলেও,নিপুর উপর ঠাকুমার চেচানি কিছুটা কমে।আজ সকালে একজন খবর দিলো সকালে নাকি শত শত লোক মরছে।কি এক অজানা
ব্যাধি ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে। শীর্ষেন্দুটা শহরে থাকে সবার বুক কেপে
উঠল।জ্যাঠাইমা তো কান্নাকাটি আরম্ভ ক্রে দিয়েছে। নিপুর বাবা কালই শহরে গিয়ে
শীর্ষেন্দুকে নিয়ে আসবে।বউদির পাশে গিয়ে দাড়ালো নিপু।বউদির চোখ জলে টুইটুম্বর
দুই সমদ্র যেখানে প্রবল জোয়ার এসেছে এখনই তো উছলে পড়বে।
চলবে,,,,
0 Comments
Thanks for your comment.